বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের সর্ব দক্ষিণের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ চালু এখন সময়ের ব্যাপার। এই মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন সহ আনুষাঙ্গিক কাজ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝী সময়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শিগগিরই সেতু চালুর খবরে খুশী স্থানীয়রা। শিগগিরই সেতু উদ্ধোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে লেবুখালী ফেরিঘাটে হয়রানি ও ভোগান্তির অবসান হবে আশা পরিবহন শ্রমিকসহ যাত্রীদের। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী ফরিঘাটে পায়রা নদীর উপর নির্মিত পায়রা সেতুর কাজ চলতি বছরের আগামী জুলাইয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর। শুক্রবার (৪ জুন) সকালে পায়রা সেতুর (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওভারঅল প্রগ্রেস ৮৫ শতাংশ হয়েছে। জুলাই মাসে পায়রা সেতুর সকল কাজ শেষে উদ্বোধন ও গাড়ি চলাচলের জন্য অবমুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বাধা বিপত্তি থাকা সত্যেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্টসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সেতুর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছেন। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সেতুর কাজ গত অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা থাকলে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে তা শেষ করতে পারেনি, তবে ঠিকাদারের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসে সকল কাজ শেষ করতে। বর্তমানে সেতুর ফিনিশিং কাজ চলমান ও টোলের জন্য অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে লল জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে কাজ। সেতুর কাজের স্থায়ীত্ব ও গুনগত মান নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সকল অবকাঠামো টেকসই ও গুনগতমানের দিক রক্ষা এবং বজায় রাখতে জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে অটল। গুনগতমান রক্ষার্থে কনসালটেন্ট ও ঠিকাদারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা সজাগ রয়েছে। এই সেতু এবং পদ্মাসেতুর ফলে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন মহাসড়ক বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মাইল ফলক। তবে বর্ষা মৌসুমে সেতুর ফিনিশিং কাজসহ সৌন্দর্য বর্ধনের বিভিন্ন কাজ করা একটি চ্যালেঞ্জ। এরপরও জুলাইয়ে মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এসময় সওজ বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তাপস কুমার পাল, পায়রা সেতুর (লেবুখালী সেতু) প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মোহাম্মদ আবদুল হালিমসহ সড়ক ও জনপদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে পায়রা সেতুর (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় একটি সভায় যোগদেন তিনি। নির্মাণাধীন পায়রা (লেবুখালী) সেতুতে পদ্মাসেতুর থেকেও ৫০ মিটার বড় দুইটিটি স্প্যান বসানো হবে। নান্দনিক এক্সটাডোজ ক্যাবল বক্স গার্ডার ব্রিজটিতে নদীর মধ্যে মূল ব্রিজ হবে ৬৩০ মিটার। এজন্য ২০০ মিটারের ২টি স্প্যান ও দু’পাশে ২টি স্পান ১১৫ মিটার করে হবে। যা দেশের সবচেয়ে বড় সেতু পদ্মার ব্রিজের স্প্যানের থেকেও বড়। চার লেনবিশিষ্ট ১,৪৭০ মিটার (৪,৮২০ ফুট) দৈর্ঘ্যরে ১৯.৭৬ মিটার (৬৪.৮ ফুট) এক্সট্রা বক্স গার্ডার ব্রিজটির উভয়দিকে ৭ কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হবে অ্যাপ্রোচ সড়ক। ব্রিজটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৪৬ কোটি টাকা। এছাড়াও সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮.৩০ মিটার উঁচু হবে। ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে না। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হবে সেতুটি। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর উপর ‘লেবুখালী সেতু’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দার উম্মুক্ত হচ্ছে সর্বদক্ষিণের। ২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় প্রকল্পটি সরকারের অনুমোন লাভ করে এবং ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
Leave a Reply